ক্যারিয়ারটেকনোলজি এবং অনলাইন

আউট সোর্সিং এর কাজ কি? জনপ্রিয় কিছু আউট সোর্সিং কোম্পানি সাইট

বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে চাহিদা পূর্ণ ক্যারিয়ার গুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ক্যারিয়ার হলো আউটসোর্সিং।  খুব অল্প সময়ে শুধুমাত্র কিছু দক্ষতা হাসিল করার মাধ্যমে খুব সহজে আয় করে নিজেকে স্বাবলম্বী করার অন্যতম উপায় হলো এটি।

 

আউটসোর্সিং কিএবং জনপ্রিয় কয়েকটি আউটসোর্সিং সাইট

 

আউটসোর্সিং মূলত একটি ব্যাবসায়িক বা প্রাতিষ্ঠানিক শব্দ যার অর্থ হলো কোনো কাজ ঐ কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোনো কর্মচারীকে দিয়ে না করিও বাহিরের কোনো ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান দিয়ে অর্থাৎ তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করিয়ে নেয়া৷ এক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষকে বলা হয় ফ্রিল্যান্সার। অর্থাৎ কোনো প্রতিষ্ঠানের আন্ডারে সরাসরি কাজ না করে তৃতীয় পক্ষ হয়ে কাজ করে দেওয়ার প্রক্রিয়া হলো ফ্রিল্যান্সিং বা মুক্তপেশা। আর যারা ফ্রিল্যান্সিং করে তাদের ফ্রিল্যান্সার বলা হয়।

 

 

আউটসোর্সিং এর উদ্দেশ্যঃ

 

আউটসোর্সিং ও ফ্রিল্যান্সিং দুটি শব্দের অর্থ কিছুটা এক মনে হলেও এই দুটি শব্দের উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ আলাদা। চলুন একটি উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাপারটিকে আরো সহজভাবে বুঝানোর চেষ্টা করি। ধরুন, আপনার ব্যাবসার কিংবা প্রতিষ্ঠানের কোনো কাজ বাইরের কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে করিয়ে নিতে চাচ্ছেন সেটা সময় বাঁচানোর জন্য হতে পারে, কম খরচের জন্য হতে পারে কিংবা স্হায়ী কাউকে নিয়োগ না করার জন্যও হতে পারে। অর্থাৎ কম খরচে বা নতুন কাউকে নিয়োগ না করে কোনো কাজ সফলভাবে করানোর প্রবনতার ধারণাটিই হলো আউটসোর্সিং। এক্ষেত্রে আপনাকে একজন আউটসোর্সার হিসেবে বিবেচিত করা হয়। অপরদিকে ফ্রিল্যান্সার হলো তারা যারা একজন আউটসোর্সারকে তার সেই কাঙ্খিত সেবা প্রদান করবে। একজন ফ্রিল্যান্সার এর এরুপ কাজ করার প্রস্তাবটিও এক প্রকার আউটসোর্স। সুতরাং সহজ ভাষায় যদি বলি, একজন কাজ করিয়ে নেওয়ার জন্য আউটসোর্স করে আর অন্যজন কাজ করে দেয়ার জন্য আউটসোর্স করে।

 

 

আউটসোর্সিং এর জন্য যে সকল গুণাবলি থাকা প্রয়োজনঃ

 

আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে নিজেকে সফলভাবে দাঁড় করাতে হলে আপনার কিছু গুণের অধিকারী হতে হবে যেমন,

 

১. অধ্যাবশায় / ধৈর্য

২. নির্দিষ্ট সেক্টরে বিশেষ দক্ষতা

৩. প্লাটফর্মে আবেদন করার যোগ্যতা

৪. নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করার মানসিকতা

৫. প্রেজেন্টেশন

 

 

 

আউটসোর্সিং যেসকল কাজের সুযোগ রয়েছেঃ

 

আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে সাধারণত কাজের কোনো শেষ নেই তবে জনপ্রিয়তার দিক থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজের তালিকা দেয়া হলো;

 

১. ডিজিটাল মার্কেটিং

২. কাস্টমার সার্ভিস

৩. ওয়েব ডেভেলপমেন্ট

৪. গ্রাফিক্স ডিজাইন

৫. সেলস এন্ড মার্কেটিং

৬. ওয়েবসাইট মেইনটেইন

৭. লোগো ডিজাইন

৮. কপিরাইটিং

৯. রিমোট অফিস এসিস্ট্যান্ট

১০. ডাটা এন্ট্রি অপারেটর

১১. ফটোশপ

১২. আর্টিকেল রাইটিং

১৩. এফিলিয়েট মার্কেটিং

১৪. অ্যানিমেশন

১৫. ড্রপ শিপিং

১৬. ভিডিও এডিটিং

১৭. ইথিক্যাল হ্যাকিং

১৮. কল সেন্টার এক্সিকিউটিভ

১৯. সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন

২০. টাইপোগ্রাফি

 

আপনি যদি একজন ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন তাহলে উপরে উল্লেখিত কাজগুলোর উপর নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে। ফলে বিভিন্ন আউটসোর্সিং ওয়েবসাইটে আপনার কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা অনেকগুণ বেড়ে যাবে এবং সহজে ভালো পারিশ্রমিকের কাজও পেয়ে যাবেন।

অপরদিকে আপনি যদি একজন আউটসোর্সার হয়ে থাকেন তাহলে বিভিন্ন আউটসোর্সিং ওয়েবসাইট হতে উপরোক্ত কাজের উপর দক্ষ এমন ফ্রিল্যান্সার কে খুজে নিতে পারেন এবং নিজের ব্যাবসা বা প্রতিষ্ঠানের জন্য চুক্তির মাধ্যমে হায়ার করে নিতে পারবেন।

 

 

কয়েকটি জনপ্রিয় আউটসোর্সিং সাইটঃ

 

আউটসোর্সার ও ফ্রিল্যান্সারদের কাজ পাওয়া ও দেয়ার জন্য প্রয়োজন কোনো একটি প্লাটফর্ম এর। আর এই প্লাটফর্মের কাজটি করেছে জনপ্রিয় কিছু ওয়েবসাইট। যেমন;

 

১. Upwork.Com

২. Fiverr.Com

৩. Freelancer.Com

৪. Guru.Com

৫. Toptal.Com

৬. Writer Access. Com

৭. Gigster.Com

৮. DesignHill.Com

৯. Creative Market. Com

১০. PeoplePerHour.Com

 

 

 

আউটসোর্সিং শিখবেন কিভাবেঃ

 

আপনি যদি একজন আউটসোর্সার হয়ে থাকেন তাহলে এক্ষেত্রে আপনার বিশেষ কিছু শেখার প্রয়োজন নেই বললেই চলে। তবে বিভিন্ন আউটসোর্সিং ওয়েবসাইট ও দক্ষ ফ্রিল্যান্সার সম্পর্কে অবগত থাকতে হবে। আপনি যে সার্ভিস খুঁজছেন সেটা লিখে সার্চ করলে ফ্রিল্যান্সারদের তালিকা চলে আসবে, সেখান থেকে আপনার চাহিদামত ফ্রিল্যান্সার খুঁজে নিয়ে তাকে দিয়ে কাজ করাতে পারবেন।

অন্যদিকে আপনি যদি একজন ফ্রিল্যান্সার হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে আউটসোর্সিং এ বিশেষভাবে দক্ষ হতে হবে। আপনার সেই দক্ষতা পরিবেশন করে ক্লায়েন্টদের আকর্ষণ করতে হবে।

বর্তমানে আউটসোর্সিং একটি উজ্জ্বল প্রফেশন। তাই বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকারিভাবেও বিভিন্ন কোর্স ও প্রশিক্ষণ সেন্টার চালু করেছে। এসকল কোর্সে অংশগ্রহণ করে সহজেই নিজেকে দক্ষ ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। তাছাড়া বর্তমানে ইউটিউবে আউটসোর্সিং এর অনেক কোর্স পাওয়া যায়। আপনি চাইলে মোবাইলের মাধ্যমে সেখান থেকেও বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পারেন।

 

 

 

আউটসোর্সিং এর পেমেন্ট মেথডঃ

 

আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে একজন আউটসোর্সার তার সুবিধামত পেমেন্ট মেথড ঠিক করতে পারে৷ এক্ষেত্রে একজন ফ্রিল্যান্সারের সেই পেমেন্ট মেথড থাকা আবশ্যক। তবে চাইলে আলোচনার মাধ্যমে সুষ্ঠু পেমেন্ট মেথড নির্বাচন করা যায়। বর্তমানে আউটসোর্সিং এর কয়েকটি জনপ্রিয় পেমেন্ট মেথড নিম্নরূপঃ-

 

১. Bank Accounts ( Debit/Credit cards)

২. Paypal

৩. Google pay

৪. EFT

৫. Payoneer

৬. Wire transfer ইত্যাদি

 

 

আউটসোর্সিং এর অসুবিধাঃ

 

এত এত সুবিধার মাঝে আউটসোর্সিংয়ের মাঝেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয় যেমন,

 

১. যেহেতু ফ্রিল্যান্সার একজন সম্পূর্ণ নতুন ব্যাক্তি সেহেতু কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের গোপনীয়তা ভঙ্গ বা তথ্য চুরির মত ঘটনা ঘটতে পারে।

২. কাজ সম্পন্ন করার পর পেমন্ট উইথড্র করার ক্ষেত্রে মাঝেমধ্যে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

৩. কাজের জন্য দক্ষ ফ্রিল্যান্সার খুঁজে পেতে সমস্যার সৃষ্টি হয় ইত্যাদি।

 

 

বর্তমানে আউটসোর্সিং একটি সময়োপযোগী একটি পেশা। যার কারণে সরকারও আউটসোর্সিং সম্পর্কে যুবসমাজকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। আউটসোর্সিং একটি দেশের রেমিট্যান্স খাতেও অবদান রাখে। তাছাড়া ফ্রিল্যান্সিং এ দক্ষ হয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি বিভিন্ন গ্রুপ তৈরির মাধ্যমে আরো মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা যায়। ফলে বেকারত্ব সমস্যাও দূর হয়।

 

 

 

 

আর্টিকেলটি ভাল লাগলে আপনার প্রিয়জনদের সাথে সাথে ফেসবুকে শেয়ার করুন এবং এই ধরনের আরো বিভিন্ন পোস্ট পেতে আমাদের সাইটটি ঘুরে দেখুন।