টেকনোলজি এবং অনলাইনসেরা দশ

ফেসবুক আসক্তি কমানোর সেরা ১০টি কার্যকরী উপায়

ফেসবুকের নেশা কমানোর সেরা ১০ উপায়ঃ

প্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন  কিন্তু ফেসবুকের নাম কখনো শোনেননি এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবেনা।  ফেসবুক নির্মাতা মার্ক জাকারবার্গ  তো বলেই দিয়েছেন যে ফেসবুক আজকের বিশ্বে চার্চের জায়গায় চলে এসেছে, হয়তো তিনি কথাটি অন্য কিছু বুঝাতে বলেছেন তবে, কথা একদম মিথ্যেও নয়।  তরুণদের যে পরিমাণ সময় ফেসবুকের পিছনে ব্যয় হয় তার সামান্যও তারা উপাসনালয়ে খরচ করেন না।

১। বাস্তবতা বুঝুন:  আপনি যতক্ষণ পর্যন্ত অনুধাবন করতে পারবেন না যে আপনি ফেসবুকে আপনার তরুণ বয়সের সবচেয়ে মূল্যবান সময়গুলো হেলায় নষ্ট করে দিচ্ছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আপনি এই আসক্তি থেকে বের হওয়ার কোনো রাস্তা পাবেন না। নিজেকে প্রশ্ন করুন ফেসবুকে যে সময় গুলো আপনি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নষ্ট করছেন এই সময়গুলোতে আসলে আপনি কি অর্জন করছেন? এই সময় গুলো যদি ফেসবুকে ব্যবহার না করে অন্য কোথাও করতেন তবে আপনি কি অর্জন করতে পারতেন? যখন আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনার মূল্যবান সময়গুলো যাকে জীবনের সবচেয়ে প্রডাকটিভ  বয়স বলে ধরে হয় তা চলে যাচ্ছে তখন আপনি পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য তৈরি হতে পারবেন।

২. প্রতিজ্ঞা করুনঃ  আপনি যে কোন আসক্তি যদি কাটিয়ে উঠতে চান তবে সবার প্রথম আপনাকে যা করতে হবে তা হচ্ছে  দৃঢ় প্রতিজ্ঞা।  নিজের কাছে কারণ দাড় করান কেন আপনি এই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে চাচ্ছেন এবং এই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে আপনি কি কি অর্জন করতে পারবেন।তখন আপনি দেখতে পাবেন আপনার মস্তিষ্কের লজিক্যাল পার্ট  আপনাকে সাপোর্ট দিচ্ছে।  আপনি নতুন উদ্যোমে আপনার এই এডিকশানটি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কাজ করতে পারবেন। 

ফেসবুক আসক্তি কমানোর ১০ উপায়

৩. স্নুজ (snooz) করে শুরু করুনঃ  আপনি আসলেই যদি ফেসবুক আসক্তি কমাতে চান। তবে ফেসবুককে আপনার জন্য কম মজাদার করে ফেলুন। বুঝিয়ে বলছি, আপনি যে সকল পেজ বা গ্রুপের পোস্ট গুলোর মধ্যে বেশি সময় লাইক কমেন্ট করে বেড়ান সে সকল গ্রুপ এবং পেজ গুলো ১ মাসের জন্য স্নুজ করে দিন। মানে আগামী এক মাস আপনার পছন্দের গ্রুপ এবং পেজের পোস্ট গুলো আপনার নিউজ ফিডে আসবেনা। তাতে আপনি ফেসবুকে আগের মত আনন্দ পাবেন না

৪. নোটিফিকেশন নিয়ন্ত্রণঃ ফেসবুকে টেনে নিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে শক্ত এবং কার্যকরী শেকলটা হচ্ছে নোটিফিকেশন। আপনি যত ব্যাস্তই থাকুন ফেসবুকে আসা নোটিফিকেশান টুং করে আপনার মনযোগ টেনে নিয়ে যাবে৷ কে কি পোস্ট করলো বা কমেন্ট করলো সেটা দেখতে আপনার মন আনচান করে উঠবে৷ তাই ফেসবুকের নোটিফিকেশন অবশ্যই নিয়ন্ত্রিত করে নিতে হবে৷ প্রথম অবস্থায় শুধুমাত্র আপনার নিজের পোস্টের জন্য নোটিফিকেশন এলার্ট অন রাখবেন৷ পরবর্তীতে পারলে নোটিফিকেশন এলার্ট অফ করে দিতে পারেন৷ যখন ফেসবুক এ্যাপে ঢুকবেন তখনই সব আপডেট দেখে নিবেন৷

৫. কমেন্ট কম করাঃ আপনি যত বেশি জায়গায় কমেন্ট করবেন, তার আফটার ইফেক্টে তত জায়গায় আপনি এংগেজ হয়ে যাবেন৷ আপনার কমেন্টের রিপ্লাই আসবে, রি-একশান আসবে সেগুলোতে আপনি রিপ্লাই দিবেন রিএক্ট দিবেন৷ এভাবে আপনি আবার নিউজফিডে হারিয়ে যাবেন৷

৬. পোস্ট কম করাঃ ঠিক কমেন্টের মতোই যত পোস্ট করবেন তত বেশি সংযুক্ত হয়ে যাবেন ফেসবুকে৷  একটা ছবি আপলোড করলে বা পোস্ট করলে বারবার আপনার দেখতে মন চাইবে কে কি রিএক্ট দিলো বা কে কি কমেন্ট করলো সেই পোস্টে৷ সেখানে তাদের কমেন্টের রিপ্লাইয়ে একটা লম্বা সময় যেমন যাবে৷ সে পোস্ট নিয়ে ভাবনায় আপনার অন্যান্য কাজেও মনোযোগ বিঘ্নিত হবে৷

৭. ফেসবুক ওয়াচ নিয়ন্ত্রণঃ বর্তমান সময়ে ব্রডব্যান্ড এর আনলিমিটেড ডাটা সুবিধায় ফেসবুকের সবচেয়ে বড় টাইম কিলার হচ্ছে ফেসবুক ওয়াচ৷ একটার পর একটা ভিডিও নিজে থেকে অন হতে থাকে বলে আপনি বুঝতেই পারবেন না একটি ৫ মিনিটের ভিডিও দেখতে নিয়ে আপনার কিভাবে ৩০-৪০ মিনিট চলে গেলো৷ তাই প্রাথমিক অবস্থায় আপনি ফেসবুক ভিডিও অটো স্টার্ট হওয়ার অপশনটি অফ করে দিন৷ এতে আপনি একটি ভিডিও দেখতে গেলে সেটি শেষ হলে পরবর্তী ভিডিও নিজে থেকে চালু না হয়ে আপনার প্লে-বাটনে চাপ দেয়ার অপেক্ষায় থাকবে৷

৮. ফেসবুক লাইট অথবা ব্রাউজার ব্যাবহারঃ আমরা অনেকেই এই যুক্তিতে ফেসবুক ব্যাবহার করি যে ফেসবুকে না থাকলে অনেক বর্তমান ইস্যু গুলো অজানা থেকে যাবে৷ সেক্ষত্রে আপনি ফেসবুক লাইট ব্যাবহার করতে পারেন অথবা যে কোন ব্রাউজারে ফেসবুক ব্যাবহার করতে পারেন। লাইট এ্যাপ এর ইন্টারফেস একটু কম আকর্ষণীয় হওয়ায় আপনার সময়ও কম ব্যায় হবে৷

৯. সময়কে অন্য কাজে ব্যায়ঃ আপনি ফেসবুক স্ক্রলিং বাদ দিয়ে যে সময়টা সঞ্চয় করছেন তা অন্য কোন ইফেক্টিভ কাজে ব্যায় করুন৷ কারন আপনি যদি অন্যকোন কাজে সে সময়টি ব্যায় না করেন তবে কিছুদিন পর আবার সেই স্ক্রলিংয়েই ফিরে আসবেন৷

১০. ফেসবুক এ্যাপ আনইন্সটলঃ প্রতিটি পদক্ষেপ ফলো করার পরও যদি আপনি তেমন ফলাফল না পান তবে কিছুদিনের জন্য ফেসবুক এ্যাপ মোবাইল থেকে ডিলিট করতে পারেন৷ ম্যাসেঞ্জারে সবার সাথে যোগাযোগ থাকলো। কিন্তু এ্যাপ ডিলিটের মধ্যমে স্ক্রল করে সময় নষ্ট করার যে প্রবণতা তা কমে আসবে৷

শেষকথাঃ 

আসলে যেকোন আসক্তি থেকে বের হয়ে আসার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নিজের সৎ ইচ্ছা এবং দৃঢ়মনোভাব। আপনার ইচ্ছা যদি প্রবল থাকে আশাকরি উপরের ১০টি উপায় আপনাকে ফেসবুক আসক্তি কমাতে সহায়তা করবে৷