রামবুটানের উপকারিতা ও অপকারিতা ও চাষ করার নিয়ম |Health benefits of Rambutan.
আজকে আমরা রামবুটান নামক একটি উপকারি বিদেশী ফল সম্পর্কে আলোচনা করব। অনেকের কাছে অপরিচিত একটি ফল, বাংলাদেশে নতুন বিদেশী ফল হওয়ায় অনেকে রামবুটানকে দাড়িওয়ালা লিচু, মালয়েশিয়ান লিচু, চায়না লিচু নামে ডাকে। কিন্তু রামবুটানের সাথে লিচুর কোন সম্পর্ক নেই। এটি খেতে খুবই সুস্বাদু, রসালো, সুমিষ্টি এবং পুষ্টিগুনে ভরপুর এক ধরনের ফল।
আসুন তাহলে জেনে নিই রাম্বুটানের বিস্তারিত।
১। রামবুটান কি।
২। রাম্বুটান কিসের জন্য ভালো।
৩। রাম্বুটান এর উপকারিতা।
৪। রাম্বুটানের ৫টি গুন।
৫। কি কি রোগের ঔষধ।
৬। বাংলাদেশের সর্বপ্রথম কোথায় রামবুটান চাষ করা হয়।
১। রামবুটান কি?
রাম্বুটান হলো এক ধরনের মাঝারি আকৃতির ফল। এটি মূলত গ্রীষ্মকালীন দেশগুলিতে পাওয়া এক ধরনের ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম নিফেলিয়াম লাপ্পাসিয়াম (Nephelium lappaceum)। এটি স্যাপিনডাসি পরিবারের অন্তর্গত একটি মাঝারি বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ। রাম্বুটান নামটির উৎপত্তি হয়েছে ইন্দোনেশীয় শব্দ রাম্বুটান থেকে, যার অর্থ রোম বা আঁশ।
উদ্ভিদবিদেরা জানান, খেতে লিচুর মতো এই ফলটির আদি নিবাস ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। এছাড়াও এটি রাম্বুস্তান নামে পরিচিত। এটি মূলত গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশের এক ধরনের ফল। প্রকৃতপক্ষে এর মানে হল চুল। এই ফলের গায়ে যেহেতু লোমের মতন চামড়া রয়েছে তাই এই ফলের এরকম নাম। ভিয়েতনামি ভাষায় এটিকে বলা হয় চামচম, যার অর্থ হলো অগোছালো চুল। রাম্বুটান মূলত মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার স্থানীয় ফল হিসেবেই পরিচিত। পরবর্তীকালে আরবে ব্যবসায়ীদের মধ্যেও এটির পরিচয় ঘটে। ১৯১২ সালে ফলটি ইন্দোনেশিয়া থেকে প্রথম ফিলিপাইনে যায়।
২। রামবুটান কিসের জন্য ভালো
এই ফলটি আকারে ছোট আকৃতির হলেও এটি তে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি’ রয়েছে। যা শরীরের অনাক্রমতা বাড়াতে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ গুলিকে বের করে দিতে সহায়তা করে। এছাড়াও রাম্বুটানের মধ্যে তামা রয়েছে, যা রক্তনালীগুলোকে এবং রক্ত কোষগুলির স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে লোহার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে কাজ করে। এটি আয়রনের একটি উৎকৃষ্ট উৎস হিসেবে পরিচিত। এর বহু স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে।
৩। রাম্বুটন এর উপকারিতা
রাম্বুটন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এক ধরনের উপাদান, যা ফ্রি রেডিকেল গুলির সাথে লড়াই করে এবং সেগুলি শরীরে যে অসুস্থতা সৃষ্টি করতে পারে তা প্রতিরোধ করতে পারে। এর মধ্যে বেশকিছু ভিটামিন রয়েছে যেগুলো শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে এবং এর মন মুগ্ধকর স্বাদ ফলটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে। এটিকে তে কিছুটা লিচুর মতো সুস্বাদু রসালো।
অন্যান্য ফল পাকা অবস্থায় গাছে বেশি দিন রাখা যায় না কিন্তু রাম্বুটান দুই মাস রাখা যায়।
৪। রাম্বুটানের ৫ পুষ্টিগুণ
লিচুজাতীয় ফল হিসেবে রাম্বুটানের নানা গুণ রয়েছে। সুস্থ থাকার জন্য রাম্বুটান খেতে পারেন। জেনে নিন এর ৫টি গুণের কথা:
#রোগ প্রতিরোধ করে
রাম্বুটান উচ্চ পুষ্টিমানসমৃদ্ধ একটি ফল। প্রজাতিভেদে শর্করার পরিমাণ থাকে ২০-২৫ শতাংশ, হজমযোগ্য আঁশ থাকে ১ শতাংশ। এ ছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ বিদ্যমান থাকায় এটি অনেক ধরনের রোগ প্রতিরোধ ও নিরাময়ে সহায়তা করে।
#নানা রোগের ওষুধ
শরীরের ক্ষতস্থান পূরণ, জ্বর কমানো, আমাশয় রোগ প্রতিরোধে রাম্বুটান ফল খাওয়া হয়। এই ফল ডায়রিয়া, আমাশয় প্রতিরোধক ও কৃমিনাশক হিসেবে কাজ করে। কাশি, পেটব্যথা, টিউমার এবং গ্লান্ডের বৃদ্ধি দমনের ক্ষেত্রেও রাম্বুটান কার্যকর।
#দরকারি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে
রাম্বুটান ঔষধি ও পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ফল। এতে আছে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীর সুস্থ রাখতে দরকারি। এতে প্রচুর আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফাইবার ও খনিজ রয়েছে। এতে আছে গ্যালিক অ্যাসিড, যা শরীরের ফ্রি র্যাডিকেলস বা রোগ সৃষ্টিকারী র্যাডিকেলস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
#দাঁত ও হাড়ের জন্য উপকারী
রাম্বুটানে আছে প্রচুর ফসফরাস, যা হাড়ের গঠনে সাহায্য করে। হাড় ও দাঁতের যত্ন নিতে রাম্বুটান খাওয়া যায়।
#প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক
রাম্বুটানকে প্রাকৃতিক অ্যান্টিসেপটিক বলা যায়। এতে থাকা নানা উপাদান শরীরকে সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারে। রাম্বুটানে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে কাজ করে।
৫। রামবুটান কি কি রোগের ঔষধ।
১-হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
২-ডায়াবেটিস চিকিৎসায় সাহায্য করে।
৩-ওজন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
৪-ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
৫-হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে।
৬-হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে।
৭-শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
৮-ইমিউনিটি বাড়াতে সহায়তা করে।
৯-যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে ও শুক্রাণুর ঘনত্ব বৃদ্ধি করে।
১০-মাথার চুল ও চুলের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে সহায়তা করে।
১১-ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়তা করে।
১২-রাতকানা রোগ দূর করে।
১৩-ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করে।
১৪-কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
১৫-ডায়রিয়া রোগ সারাতে সহায়তা করে.
১৬-সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
১৭-মোমবাতি ও সাবান তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
৬। বাংলাদেশের প্রথম কোথায় রাম্বুটানের চাষ হয়?
নরসিংদীতে অনেক বছর ধরেই রাম্বুটানের চাষ হচ্ছে।
নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার কৃষক মজনু রাম্বুটানের চাষ করছে ।
রাম্বুটান চাষি মজনু বলেন, ‘২০০৬ সালে তার ভাই মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফেরার পথে কয়েকটা রাম্বুটান ফল এনেছিল । এগুলো খাওয়ার পর এর বীজ দিয়ে বাড়ির আঙিনায় ১টি গাছ রোপণ করি।তারপর ২০১১ সালে প্রথম এই গাছে ফল এসেছে মাত্র কয়েকটা। প্রথমে ভেবেছি এটিতো মালয়েশিয়ান ইন্দোনেশিয়ান ফল তাই বাংলাদেশের মাটিতে হবে কিনা। রাম্বুটান গাছে ফল বছরে ২ বার ফল আসে বিধায় এই ফল বিক্রি করে তিনি অনেক লাভবান হয় এবং বছরে তার আয় হয় ৩-৪ লাখ টাকা।
গাছ লাগানোর পাঁচ বছর পরে গাছে ফুল আসে। প্রথম অবস্থাতে এত ফল হয় না কিন্তু আস্তে আস্তে গাছ যত বড় হয় ফলনও তত বৃদ্ধি পায়।
রাম্বুটানের চারা সাধারণত বীজ থেকে উৎপাদন হয়।কৃষক মজনু চারা উৎপাদন করে তা বিক্রি করে।
তার রামবুটান চারার দাম বর্তমানেঃ
এক বছর হলে ৫০০৳
দুই বছর হলে ১০০০৳
তিন বছর হলে ২০০০৳
***তিনি আরো বলেন একবছরের চারার কোনো গ্যারান্টি নেই।
রামবুটান বিদেশী ফল হলেও এর উপকারিতা অপরিসীম। সবাই মজাদার এই ফলটি নিজেদের খাবার তালিকায় রাখতে পারেন।