নিউট্রিশন

এভোকাডো ফলের উপকারিতা ও অপকারিতা ব্যবহারবিধি এবং চাষ পদ্ধতি

এভোকাডো ফল বর্তমানের খুব সুপরিচিত একটি ফল।এটি একটি ম্যাক্সিকান ফল। বাহির থেকে এটি সবুজ খোসাযুক্ত, ভিতরে রয়েছে মাখনের মত হলুদ নরম অংশ ও বড় একটি বিচি৷ এই ফলটির আরেক নাম কুমির নাশপাতি। এই ফল এতটাই পুষ্টিসমৃদ্ধ যা নির্দ্বিধায় আপনি আপনার ডায়েট চার্ট অথবা নিয়মিত নিজের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন।আসুন জেনে নিই এর পুষ্টিগুণসমূহঃ 

পটাশিয়ামঃ এভোকাডোতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম যেটি আমাদের দাঁতের অবক্ষয় রোধ করে মাড়ি ফোলা দূর করে।মুখের বাজে গন্ধ দূর করে।এটি ওরাল ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

বোরনঃ এভোকাডোতে থাকা খনিজ পদার্থ বোরন ক্যালসিয়াম শোষণ করে হাড় মজবুত করে। হাড় গঠনের জন্য অত্যন্ত উপকারী এই ফলটি।

ফাইবারঃ এভোকাডোতে থাকা ফাইবার হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।ফাইবার ও হেলদি ফ্যাট থাকার কারণে এভোকাডো লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করর খাদ্য পরিপাকের মাধ্যমে কোষ্ঠকাঠিন্য রোগ দূর করে।১০০ গ্রাম এভোকাডোতে ৭ গ্রাম ফাইবার পাওয়া যায়। এছাড়া ফাইবার রক্তে সুগারের পরিমাণ কমায় ফলে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা পরিমিত পরিমানে এভোকাডো খেতে পারেন।

এভোকাডোর ছবি
এভোক্যাডো

ভিটামিন বি, সি, ইঃ এভোকাডোতে ভিটামিন বি থাকার কারণে এটি ত্বক ও চুলের জন্য খুব উপকারী।প্রসাধনী সামগ্রী হিসেবেও এটি ত্বক ও চুলের জন্য ব্যবহৃত হয়। ভিটামিন সি আমাদের রোগ প্রতিরোধ করে থাকে।ভিটামিন ই বাতের ব্যথার উপশম করে।

ফলিক এসিডঃ এভোকাডোয় প্রচুর পরিমাণে খনিজ পর্দাথ ফলিক এসিড উপস্থিতি আছে বিধায় এটি গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টিতে ভুমিকা রাখে।যেহেতু   গর্ভবতী মায়েদের প্রতিদিন ৬০০ গ্রাম  ফলিক এসিডের প্রয়োজন হয় তাই তারা ফলটিকে গ্রহণের মাধ্যমে ফলিক এসিডের অভাব পূরণ সম্ভব।ফলিক এসিড গর্ভাবস্থার প্রথমদিকের ভ্রুণের মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ড বিকশিত করতে সাহায্য করে।

ম্যাগনেসিয়ামঃ এভোকাডোতে আছে ম্যাগনেসিয়াম যা ভালো ঘুম আনয়নে সহায়তা করে।তাই ভালো ঘুমের জন্য আমরা এভোকাডো নিজেদের দৈনিক খাবারের চার্টে রাখতে পারি।

ক্যারিটোনোয়েড লুটেইন ও জেক্সানথিনঃ চোখের স্বাস্থ্যের জন্য এভোকাডোতে থাকা এই দুইটি উপকারী উপকরণ চোখের ছানি পড়া রোধ করে ও দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়।

ফাইটোক্যামিক্যালঃ এভোকাডোতে থাকা এই উপাদান আমাদের শরীরে ক্যান্সারের কোষ উৎপন্ন হতে বাধা প্রদান করে।মুখ প্রোস্টেট ত্বকে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

ক্যালরিঃ এভোকাডোয় আছে প্রচুর পরিমাণ ক্যালরি।১০০ গ্রাম এভোকাডোতে ১৬০ গ্রাম ক্যালরি পাওয়া যায়। তাই ক্যালরির চাহিদা পূরণ করার জন্য আপনিও আপনার খাবারের তালিকায় এভোকাডো অনায়সে রাখতে পারেন।

এভোকাডোর ব্যবহারঃ

সকালের খাবারে আমরা এভোকাডো খেলে যে পুষ্টি পেয়ে থাকি তা সারাদিনের কাজ করার শক্তি যোগায়। প্যানকেক,সালাদ,স্যান্ডউইচ ইত্যাদির সাথে এভোকাডো খেলে খুব মজা পাওয়া যায়।মাংসের বারবিকিউ ও চিকেনের সাথে মেয়োনিজের বদলে এভোকাডো ব্যবহার করা যেতে পারে।তাছাড়া এভাকাডোর সাথে যদি লেবুর রস, দুধ,ক্রিম দিয়ে আপনি সহজেই এভাকাডো আইসক্রিম তৈরি করে ফেলতে পারেন।

এভোকাডোর  অপকারিতাঃ

এতগুণ থাকা সত্ত্বেও এভোকাডো কিছু সামান্য পরিমাণ অপকারিতা আছে।উপকারীতার পাশাপাশি আমাদের এই ফলটির অপকারিতাও জানা জরুরি।নিম্নে উল্লেখ করা হলোঃ

১.এভোকাডোয় হেলদি ফ্যাট থাকলেও তা যদি অতিরিক্ত মাত্রায় খাওয়া হয় তবে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।

২.এভোকাডোতে থাকা পটাশিয়াম একদিকে যেমন আমাদের দাঁতের জন্য উপকারী ঠিক অন্য দিকে এই উপাদানটি অতিমাত্রায় গ্রহণে কিডনির সমস্যা হতে পারে।

৩.ল্যাটেক্স এলার্জি রোগীদের জন্য এই ফলটি খাওয়া নিষেধ কারণ এভোকাডো খেলে তাদের এই এলার্জি রোগের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।এই রোগে আক্রান্ত রোগীদের অবশ্যই এভোকাডো খাওয়া হতে বিরত থাকতে হবে।

এত গুণের মাঝে সামান্য কিছু অপকারিতা খুবই নগণ্য।পুষ্টিসমৃদ্ধ এই ফল হয়ে উঠতে পারে আপনার ডায়েট চার্টের অন্যতম উপকরণ।পরিমিত পরিমাণে এই ফল গ্রহণে আপনিও উপভোগ করতে পারবেন এই ফলটির গুণসমূহ তাই আজ থেকেই ফলটি খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।