মোটিভেশনাল স্টোরি

সেরা ১০ বাংলা মোটিভেশনাল স্টোরি। অনুপ্রেরণামূলক ছোট গল্প

 মাঝে মাঝে মানুষের জীবনকে সামনে এগিয়ে নিতে কিছু মোটভেশনাল কথা, গল্প, উক্তি ঘুরে দাড়ানোর মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। মানুষ এসব শিক্ষণীয় গল্প থেকে নিজেদের চলার পথে আলোর দেখা পায়। আজকে আগামীর বাংলার এই আর্টিকেলটি এমনই কিছু শিক্ষণীয় ছোট গল্পের সমাহার, যা আপনার জীবনে চলার পথে অনুপ্রেরণা জাগাবে। 

 

মোটিভেশনাল কিছু ছোট গল্পঃ

সেরা অনুপ্রেরণামূলক গল্প
বাংলা মোটিভেশনাল স্টোরি

১। ব্যাঙের দলঃ

 একবার একদল ব্যাঙ বনের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। এমন সময় এই ব্যাঙ এর দল থেকে দুইটি ব্যাঙ গভীর গর্তে পরে গেলো । গর্তটি এতটা গভীর ছিল যে সেটি থেকে উঠে আসা খুবই কঠিন। তবুও ব্যাঙ দুইটি তাদের সাধ্য মতো চেষ্টা করে যাচ্ছিল। দলের অন্য ব্যাঙ গুলো বলাবলি করছিলো যে এদের এই গর্ত থেকে বের হয়ে আসার কোন আশা নেই। কিন্তু আদম্য ব্যাঙ দুইটি চেষ্টা করতেই থাকলো, তারা প্রাণপনে লাফিয়ে লাফিয়ে খাদটির ঢালু জায়গা পার করে শেষের দিকের খাড়া অংশের কাছে এসে এসে আবার উল্টো নিচের দিকে পরে যাচ্ছিল। তখন উপরে থাকা বাকি ব্যাঙ গুলো চিৎকার করে তাদের বলছিল যে, “তোমরা কিছুতেই উপরে উঠতে পারবেনা” , “এটি খুবই বড় গর্ত” , “ এখান থেকে উঠে আসা কোন ভাবেই সম্ভব না” তাদের কথা গুলো এমন ছিল যেন তারা বলতে চাইসে শুধু কষ্ট করে লাভ নেই, আশা ছেড়ে দিয়ে মৃত্যুকে স্বীকার করে নাও কষ্ট থেকে মুক্তি পাও।

ব্যাঙ এর ছবি
ব্যাঙ এর দল মোটিভেশান গল্প



দুইটি ব্যাঙ্ এর মধ্যে একটি তাদের কথায় কান দিলো এবং গর্তের উপরের দিকে ওঠা বাদ দিয়ে আরো গভীরের দিকে লাফিয়ে পরে মরে গেল। কিন্তু ২য় ব্যাঙটি আরো উদ্দ্যম নিয়ে লাফাতে লাগলো ,আর উপরে থাকা ব্যাঙেরা আরো জোরে চিৎকার করে বলতে লাগলো “এই বৃথা কষ্ট করোনা,মৃত্যুকে সহজ করো” । কিন্তু ব্যাঙটি অবশেষে উপরে উঠে এলো। উপরে ওঠার পর ব্যাঙটি যা বললো তাতে দলের সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ব্যাঙটি বললো- “ উপরে থেকে তোমাদের চিৎকার করে করে আমাকে উৎসাহ দেয়ার কারনেই আমি মনোবল পেয়ে উপরে উঠে আসলাম। তোমরা না থাকলে আমি হয়তো হাল ছেড়ে দিতাম। আমি কানে শুনতে পাইনা, শুধু চোখে দেখেছি তোমরা গলা ফাটিয়ে আমাকে উপরে উঠে আসতে বলছো”।


গল্পের শিক্ষাঃ

আশেপাশের মানুষের একটু উৎসাহ মানুষকে কঠিন বিপদেও সামনে এগিয়ে যেতে সহায়তা করে। এবং নেতিবাচক কথায় কান না দিয়ে নিজ লক্ষ্যে অবিচল থাকলে সফলতা আসে।

 

২। প্রজাপতির গল্পঃ

প্রজাপতির ছবি
প্রজাপতির গল্প

একবার  একজন মহানুভব ব্যাক্তি তার বাগানে একটি প্রজাপতির গুটি (ডিম) দেখতে পেলেন। তিনি দেখতে পেলেন প্রজাপতিটি নিজের গুটি থেকে বের হওয়ার জন্য অনেক চেষ্টা করছে কিন্তু বের হতে পারছেনা। সদ্য জন্মানো প্রজাপতিটি অনেক চেষ্টা এবং পরিশ্রম করছে কিন্তু যে ডিম বা গুটি থেকে সে জন্মাচ্ছিল সেটি থেকে সে তাঁর শরীরের বাকি অংশ বের করতে পারছে না । একটা অবস্থায় গিয়ে মনে হচ্ছে হয়তো প্রজাপতিটি আর বের হতেই পারবেনা, সে দাপাদাপি করেও থেমে গেছে। এ দৃশ্য দেখে লোকটির অনেক মায়া হলো । এবং সে গিয়ে গুটির বাকি অংশটি একটি কেচি দিয়ে কেটে প্রজাপতিটিকে বের করে ফেললো।

কি মনে হচ্ছে লোকটি প্রজাপতিটির উপকার করেছে তাইনা? আসলে আপাত দৃষ্টিতে এটি উপকার মনে হলেও প্রজাপতিটির সবচেয়ে বড় ক্ষতিটি হয়েছে এই লোকের কারনে। প্রজাপতিটি গুটি থেকে বের হয়ে আসার জন্য যে চেষ্টাটি করছিলো তাতে প্রজাপতিটির শরীর আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ নেয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিল। তাঁর ডানা ঝাপটানোর ফলে গুটিতে থাকা ঈশ্বর প্রদত্ত তরল পদার্থ তার ডানা শক্ত হতে সাহায্য করছিলো। কিন্তু এই লোকটি যখন এটিকে বিনা পরিশ্রমে বের হয়ে আসতে সহায়তা করলো তখন তার ডানা রয়ে গেল অপরিপক্ক। প্রজাপতিটি  এর বাকি জীবনে কখনো ঠিক মতো উড়তেই পারেনি, কারন তার ডানা উড়ার জন্য যথেষ্ট্য মজবুত ছিল না।

গল্পের শিক্ষাঃ

জীবনের প্রতিটা সমস্যা, প্রতিটা প্রতিবন্ধকতা আমাদেরকে সামনের দিন গুলোর জন্য শক্তিশালী করে। কষ্ট ছাড়া বড় হওয়া যায়না। তাই নিজের জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অন্যের আশায় বসে থাকা বা অন্যের কাধে ভর করে পার করে দেয়া আমাদের নিজেদের জন্যই ক্ষতিকর।



৩। থিংক আউট অফ দ্যা বক্স (ভিন্ন ভাবে ভাবুন)

ছবিঃ নুড়ি পাথর
নুড়ি পাথর বাছাই


গল্পটি শত বছর পুর্বে ইতালির একটি ছোট শহরের একজন ব্যাবসায়ীর মেয়ের বুদ্ধিদীপ্ত কাজের। একজন বৃদ্ধ ব্যাবসায়ী তার ব্যাবসার জন্য শহরের একজন রক্তচোষা মহাজনের থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়েছিলেন ।কিন্তু কিন্তু কয়েক বার টানা লোকসান হওয়ায় এবং মহাজনের সুদের টাকা চক্রবৃদ্ধি হারে বেরে যাওয়ায় ব্যাবসায়ীর জন্য টাকা পরিশোধ করা কঠিন হয়ে যায়। সে সময় মতো টাকা পরিশোধ করতে পারছিলো না। এমন সময় মহাজন বললো সে এক শর্তে সকল কর্জ মাফ করে দিবে, যদি ব্যাবসায়ী তার মেয়েকে মহাজনের সাথে বিয়ে দেয়। মহাজন মানুষ হিসেবে ভাল ছিল না তাই ব্যাবসায়ীর প্রস্তাবটি পছন্দ হয়নি। তখন মহাজন বললো ঠিক আছে তাহলে চলুন আমরা আপনার বাগানে থাকা সাদা এবং কালো নুড়ি পাথর দিয়ে একটি ভাগ্য পরীক্ষা করি। আমি এই বাগানের পাথুরে রাস্তা থেকে একটি সাদা এবং একটি কালো পাথর নিয়ে একটি ব্যাগে রাখবো। সেখান থেকে আপনার মেয়ে একটি পাথর তুলবে। যদি সে কালো পাথরটি তোলে তবে সে আমাকে বিয়ে করবে এবং আপনার সব ঋণ আমি ছেড়ে দিবো এবং সে যদি সাদা পাথরটি তোলে সে ক্ষেত্রেও আমি আপনার ঋণ মওকুফ করে দিবো কিন্তু আপনার মেয়ের আমাকে বিয়ে করতে হবেনা। এমন সময় মহাজন যখন বাগানের রাস্তাটি থেকে নুড়ি পাথর থলেতে রাখার জন্য তুলছিল তখন মেয়েটি দেখে ফেলে যে, মহাজন একটি সাদা এবং একটি কালো পাথরে বদলে দুইটিই কালো পাথর নিয়ে ব্যাগে রেখেছিল । এই অবস্থায় মেয়েটির সামনে তিনটি পথ ছিল-

১. ব্যাগ থেকে পাথর বাছাই করতে অস্বীকার করা।

২. ব্যাগ থেকে উভয় নুড়ি পাথর বের করে নিয়ে মহাজনের ষড়যন্ত্র প্রকাশ করে ফেলা।

৩. ব্যাগ দুইটিই কালো পাথর আছে জেনেও একটি পাথর তুলে বাবার স্বাধীনতার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা।

কিন্তু এই প্রতিটি পদক্ষেপেই তার এবং তার বাবার জন্য বিপদ ডেকে আনতো। কিন্তু মেয়েটি যা করলো তাতে মহাজন বোকা বনে গেল।

মেয়েটি ব্যাগ থেকে একটি পাথর বের করে সেটি দেখার আগেই অজ্ঞতাবশত হাত থেকে পাথুরে রাস্তায় ফেল দিলো। এবং এমন ভান করলো যে পাথরটি দুর্ঘটনাক্রমে নিচে পরে গেছে এবং রংটি দেখার সুযোগ হয়নি। সে মহাজনকে বললো যে, “দেখুন তো, কি বোকার মতো কাজ করলাম, পাথরের রংটি দেখার আগেই হাত থেকে পরে গেলো। আমি কি রং এর পাথরটি তুলেছিলাম যাচাই করতে ব্যাগটি চেক করুন।“ ব্যাগে যেহেতু ২য়টিও কালো পাথরই ছিল, তাই মহাজনের শর্ত মোতাবেক পরে যাওয়া পাথরটি সাদা হওয়ার কথা। এভাবেই মেয়টি এবং তার বাবা মহাজনের ছল চাতুরী থেকে রেহাই পেল।

গল্পের নৈতিক শিক্ষাঃ

সব সময় কঠিন পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার উপায় থাকে । শুধু মাথা ঠান্ডা করে একটু আউট অফ দ্যা বক্স চিন্তা করতে হয়। আমাদের যে আপশন গুলো দেয়া হয়েছে এর বাইরেও আপশন থাকতে পারে।

৪। শেকলে বাধা হাতিঃ

একদা এক বাচ্চা ছেলে তার বাবার কাছে বায়না ধরলো সে সার্কাস দেখতে যাবে। বাবা তাকে সার্কাস দেখাতে নিয়ে গেলেন। সার্কাস শুরুর আগে বাবা তার ছেলেকে সার্কাসের তাবুর বাইরে রাখা বিভিন্ন পশু পাখির খাঁচার সামনে দিয়ে ঘুরিয়ে পশুপাখি দেখাচ্ছিলেন। দেখতে দেখতে তারা হাতির সামনে চলে আসলো। তারা দেখতে পেল হাতিটি খাঁচায় বন্দী করে রাখার বদলে একটি চিকন শিকল দিয়ে পায়ে বাধা আছে, যেটি হাতি চাইলেই ছিড়ে পালিয়ে যেতে পারে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো হাতিটি সে চেষ্টাই করছেনা।

 

এটি দেখে ছেলে খুব অবাক হলো এবং তার বাবাকে এর কারন জিজ্ঞাসা করলো। বাবা হাতির মাহুতকে(রক্ষণাবেক্ষণকারী) ডেকে এর কারন জিজ্ঞাসা করলেন। হাতির মাহুত উত্তর দিল – যখন এই হাতি গুলো অনেক ছোট ছিল, তখন আমরা তাদের এই সাইজের শিকল দিয়েই বেধে রাখতাম। সে সময় তারা তা ছেঁড়ার অনেক চেষ্টা করতো এবং ব্যার্থ হতো। সে বয়সে এই শিকল তাদের আটকে রাখার জন্য যথেষ্ট ছিল। এ অবস্থায় যখন তারা বড় হতে থাকে তারা বিশ্বাস করে নেয় যে এই শিকল ছেঁড়া কখনোই সম্ভব নয়। তাই এখন তারা এই শেকল এর চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হলেও তাদের বিশ্বস এর কাছে তারা বাধা পরে আছে এবং তা ছিঁড়তে চেষ্টা করেনা।

গল্পের অনুপ্রেরণামূলক শিক্ষাঃ

সফল হওয়ার ক্ষেত্রে প্রথম ধাপ হলো এটি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা যে আপনি সফল হবেন। বাধা যতই আটকে রাখতে চেষ্টা করুক, সফলতার বিশ্বাস মনে নিয়ে নিজের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।


৫। জ্ঞানীর দেওয়া সমস্যার সমাধানঃ

 

একজন জ্ঞানী ব্যাক্তি তার আস্তানায় ধন্যমগ্ন থাকতেন। এবং বিকেলের সময় তিনি বিভিন্ন মানুষের সমস্যার কথা শুনে তাদের বিভিন্ন উপদেশ দিতেন এবং সমস্যা সমাধানের উপায় বলে দিতেন। কিছু লোক  সমাধান জানার পরও প্রায়ই একই সমস্যা নিয়ে তার কাছে বারংবার আসতে শুরু করলো। এসে কান্নাকাটি করতো।

একদিন জ্ঞানী ব্যাক্তিটি তাদের একটি কৌতুক বললেন, উপস্থিত সবাই অট্টহাসিতে ফেটে পরলো।

কয়েক মিনিট পর আবার সেই একই কৌতুক বললেন, এবার অল্প কিছু লোক হাসলো।

যখন তিনি একটুপর তৃত্বীয়বারও একই কৌতুক বললেন কেউই হাসলো না।

তখন তিনি বললেন-

“তোমরা একই কৌতুকে বার বার হাসতে পারোনা, তবে একই সমস্যায় বার বার কেন কাঁদো?”

গল্পের অনুপ্রেরণামূলক শিক্ষাঃ  দুশ্চিন্তা, হায়-হুতাশ করা শুধুমাত্র শক্তি এবং সময় অপচয়। এটি কখনো সমস্যার সমাধান করতে পারেনা।

 

৬। জার ও জীবন


একজন শিক্ষক একদিন তার ক্লাসে একটি কাচের জগ এবং তিনটি প্যাকেট নিয়ে ঢুকলেন। প্যাকেটে কি ছিল দেখা যাচ্ছেনা। শিক্ষক প্রথমে জগটি টেবিলের উপর রেখে তাতে পাথর এর টুকরো ভরা শুরু করলেন। এবং জগটির গলা পর্যন্ত ভরে ফেললেন। তখন ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করলেন। জগটি কি  ভরে গেছে??

সবাই একত্রে উত্তর দিল জ্বী স্যার, ভরে গেছে।

তখন শিক্ষক বলেলেন অপেক্ষা করো। তিনি ২য় প্যাকেটটি থেকে ছোট ছোট নুড়ি পাথর বের করলেন এবং ঢালতে শুরু করলেন এবং উপচে পরা পর্যন্ত ভরতে থাকলেন। নুড়ি গুলো বড় পাথরের ফাকা গুলোতে গিয়ে জায়গা দখল করে নিল। তিনি বললেন এখন বলো তো জগটি পুরোটি ভরেছে??

তখন ছাত্ররা বলেন, জ্বী স্যার। এবার পুরোটি ভরেছে।

শিক্ষক এবারও বললেন অপেক্ষা করো। তখন তিনি তার আরেকটি প্যাকেট থেকে বালি বের করে জগটিতে বালি ঢালতে শুরু করলেন। বালির ক্ষুদ্র অতি ক্ষুদ্র কণা গুলো জগে পাথর ও নুড়ি পাথরের মধ্যে থাকে সামান্য ফাকা গুলও দখল করে নিয়ে জগটি ভরে ফেললো।

এবার শিক্ষক নিজেই বললেন এবার জগটি সম্পূর্ণ ভরেছে।

 

এবার শিক্ষক বললেন এই জগটি হচ্ছে আমাদের জীবনের মতো । এই বড় পাথর গুলো হচ্ছে আমাদের পরিবার, আর এই নুড়ি পাথর গুলো হচ্ছে আমাদের ক্যারিয়ার এবং অন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ সমূহ । এবং সব শেষের ক্ষুদ্র বালি কণা হচ্ছে ইগো, রাগ, ঝগড়া এর মতো ক্ষতিকর আপ্রয়োজনীয় জিনিশ।

 

যদি তোমোরা সর্বপ্রথম বালি দিয়ে তোমাদের জগটি ভরে ফেলো তবে, প্রয়োজনীয় পাথর এবং নুড়ি পাথরের জন্য যেমন জায়গা অবশিষ্ট থাকবেনা, তেমনি জীবনে রাগ, ইগো, নেগেটিভিটি দিয়ে ভরে ফেললে পরিবার, কর্মজীবন এবং সুখ শান্তিরও কোন জায়গা থাকেনা।

গল্পের অনুপ্রেরণামূলক শিক্ষাঃ জীবনের প্রায়োরিটি লিস্ট সঠিক ভাবে নির্বাচন করার মধ্যে জীবনের সুখ শান্তি ও সফলতা নির্ভর করে। 

 

৭। নিজেকে বদলাতে শিখুন 

 

একবার এক রাজা চোখের সমস্যা নিয়ে খুবই বিপদে ছিলেন। তাই রাজা অনেক জায়গায় যাচ্ছেন কিন্তু কোনো ভাবেই চোখ ভাল করতে পারছে না।

পরে সে রাজা সন্ধান পেলেন তার রাজ্যের বনে এক সন্ন্যাসি থাকেন। যে সন্ন্যাসী সব ঠিক করে দিতে পারে।

তারপর রাজা গেলো সেই সন্ন্যাসীর কাছে, গিয়ে বললো সন্ন্যাসী  আমার চোখের সমস্যা ঠিক করে দিন। সন্ন্যাসী দেখে বললো রাজা আমি আপনার সমস্যা বুঝতে পেরেছি।

আপনি এক কাজ করুন এখন থেকে শুধু লাল জিনিসের উপর চোখ দিবেন। শুধু লাল রঙ দেখবেন, তারপর দেখবেন সব ঠিক হয়ে গেছে। রাজা বললো আচ্ছা ঠিক আছে।

রাজা রাজ্যে ফিরে গিয়ে তার রাজপ্রাসাদ পুরোটা এবং সবকিছু লাল রঙ করে ফেললো। কিছুদিনপর আস্তে আস্তে রাজার চোখ ভালো হতে লাগলো।

তখন রাজা খুশি হয়ে তার সৈন্যদেরকে বললো যাও সেই সন্ন্যাসীকে নিয়ে আাসো আমি তাকে পুরস্কৃত করতে চাই।

তারপর সন্ন্যাসী যখন আসলেন তখন সৈন্যরা বালতি ভরে লাল রঙ দিয়ে তাকে ভিজিয়ে দিলো।

 তারপর সন্ন্যাসী রাজার কাছে গেলো,

রাজা তাকে  জিজ্ঞাস করলো- “কেমন আছেন?”

তখন সেই সন্যাসী বললেন- “দেখতেই তো পাচ্ছেন”, তিনি রাগান্বিতস্বরে বললেন, “রাজা আপনি আমাকে এমন লাল রঙ দিয়ে রঙ্গিন দিতে বললেন কেনো”?

পরে রাজা বললেন- “কেনো আপনিইতো বলেছেন লাল রঙ দেখতে, রং না দিলে পরে আপনাকে দেখলেতো আমার চোখে সমস্যা হবে তাই।“

তখন সন্ন্যাসী বললেন- “রাজা আপনিতো একটা লাল চশমা পরলেই পারতেন৷”

তখন রাজা বললেন- “আরে সত্যিইতো!” রাজা লজ্জায় পরে গেলেন।

তারপর সন্ন্যাসী বললো- “দেখেছেন রাজা আমরা সমস্যায় পরলে আশে পাশের সব কিছু পরিবর্তন করতে চাই কিন্তু সমস্যার সমাধান যে আমাদের ভিতরই আছে তা লক্ষ করিনা”।

 আমরাদের নিজেদের বদলাতে বড় বড় কোনো দেশে যেতে হবে না নিজের দেশে থেকেই নিজেকে বদলাতে পারবো।  আমার বদলালে আমাদের পপরিবার বদলাবে,  আমদের সমাজ বদলাবে আর সমাজ বদলালে আমাদের দেশ বদলে যাবে।


গল্পের শিক্ষাঃ আমরা নিজেদের অনেক সমস্যা গুলো চাইলেই নিজের মধ্যে সামান্য পরিবর্তন এনে প্রতিকার করতে পারি। 

 

৮। যে যেমন করে তার কাছেই তা ফিরে আসে

 

গল্পটি একজন কৃষকের যে প্রতিদিন একটি রুটির দোকানে এক কেজি করে পনির বিক্রি করতো এবং এক কেজি করে রুটি কিনে আনতো ।

রুটির দোকানদার এর সাথে তার অনেক পুরোনো পরিচয় হওয়ায় দোকানদার তার থেকে পনির নেয়ার সময় আর মাপ দেয়ার প্রয়োজন মনে করতো না এবং কৃষকও তার থেকে এক কেজি রুটি কোন মাপঝোপ ছাড়াই নিয়ে চলে যেতো ।

তো একদিন পনিরের দোকানে এক নতুন কর্মচারী চাকুরি নিলো, কৃষক যখন তার পনির বিক্রি করতে আসলো তখন সে পনির কৃষকের থেকে নেয়ার পর সেটা ওজন করে দেখলো। ওজন করতে গিয়ে দেখা গেলো পনির এক কেজির চেয়ে ১০০ গ্রাম কম আছে।

সে তার দোকান মালিককে ঘটনা জানালো এবং দোকানদার খুব রেগে গেলো এবং পরের দিন কৃষক আসার পর সে তাকে খুব বকাঝকা করলো। সে বাজারে বিচার ডেকে নালিশ করলো যে কৃষক তাকে ঠকিয়ে প্রতিদিন ১০০ গ্রাম করে কম পনির দিয়েছে। 

তখন বিচারক কৃষকের কাছে এই চুরির কারন জানতে চাইলো । তখন কৃষক বললো – “আমি খুব গরীব মানুষ হুজুর , কিন্তু চোর নই।

আমার বাসায় পরিমাপ করার কোন পাল্লা নেই, তাই প্রতিদিন রুটির দোকান থেকে যে ১ কেজি রুটি নিয়ে যাই সেটি দিয়েই ওজন করে দোকানদারকে সমপরিমান পনির দিয়ে যাই।

তাই আমার জানা ছিলনা যে এখানে ১০০ গ্রাম রুটি কম ছিল। এরপর অনুসন্ধান করে কৃষকের কথা সত্য প্রমাণিত হলো এবং দোকানদার সবার সামনে লজ্জিত হলো । 


গল্পের শিক্ষাঃ যেমন কর্ম তেমন ফল ।

৯। সবাইকে সমান মূল্যায়ন করুন

 

গল্পটি অনেকদিন আগের আমেরিকার এক বিকেলের, যখন আইসক্রিম স্যান্ডির দাম অনেক কম ছিল।

একটি ১০ বছরের ছেলে একটি হোটেলের আইসক্রিম কর্ণারে ঢুকে একটি টেবিলে বসল।

 একজন ওয়েটার তার কাছে অর্ডার নিতে আসলো।

ছেলেটি তার কাছে জানতে চাইলো-

“একটি আইসক্রিম স্যান্ডির দাম কত?”

ওয়েটার উত্তর দিল, “৫০ সেন্ট,”।

ছোট ছেলেটি তার পকেট থেকে কতগুলো কয়েন বের করে গুনতে শুরু করলো।

তারপর জিজ্ঞাসা করলো, “একটি সাধারণ আইসক্রিমের দাম কত?”
হোটেলে আসা কিছু গেস্ট তখন টেবিলের জন্য অপেক্ষা করছিল এবং একারনে ওয়েটার কিছুটা তারাহুড়ো করছিল,কারন তাদের থেকে যত্নের সাথে অর্ডার নিলে সে হয়তো কিছু টিপ পেতে পারে।

সে বিরক্তিরস্বরে বলল- “৩৫ সেন্ট” ।

ছোট ছেলেটি আবার কয়েনগুলো গুনে নিল। এবং বললো “আমি সাধারণ আইসক্রিমই নেব”।

ওয়েটার আইসক্রিম নিয়ে এল, এবং টেবিলে বিলটা রেখে তাকে কিছু না বলেই চলে গেল। ছেলেটি আইসক্রিমটি খেয়ে, ক্যাশিয়ারকে টাকা দিয়ে চলে গেল।

ওয়েটার লোকটি যখন ফিরে এলে, সে টেবিলটি মুছতে শুরু করে এবং তারপর যা দেখলো তাতে তার চোখে জল আসলো।

সেখানে, খালি প্লেটেরর পাশে সুন্দরভাবে রাখা ছিল, ১৫ সেন্ট – তার টিপ।

গল্পের শিক্ষাঃ কাউকে উপরের রুপ দেখে অবহেলা করা উচিত নয়।

 

১০। পূর্ণ চেষ্টা সাফল্য আনে 


একবার দুই বন্ধু রাজু এবং সাজু গ্রাম থেকে দূরে খেলতে এসেছে। রাজুরর বয়স ৫ এবং সাজুর বয়স ৭ বছর।  তারা একটি পুরোনো কূপের পাশে খেলছিল। 

এমন সময় সাত বছর বয়সী সাজু খেলতে খেলতে কূপে পরে যায়৷ এবং পাচ বছর বয়সী রাজু তাকে কূপ থেকে পানি ওঠানোর জন্য যে বালতি এবং রশি ব্যাবহার করা হয় সেটি দিয়ে টেনে তোলার চেষ্টা করছে।   

কূপে পরে যাওয়া  বয়সে বড় ছেলেটি ওজনেও রাজুর চেয়ে বেশি ছিল।

ওরা যেহেতু গ্রাম থেকে অনেক দূরে চলে এসেছিল তাই সাহায্য করার জন্যও কেউ ছিল না আসে-পাশে।

তাই বয়সে ছোট ছেলেটি তার বন্ধুর কান্না দেখে নিজের শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে রশিটি টানতে শুরু করলো।

সে তার মনের এবং দেহের পূর্ণ ইচ্ছা শক্তি যেন রশিতে কেন্দ্রীভুত করে ফেলেছে৷ তার সুধু একটাই চিন্তা এই রশি টেনে তার বন্ধুকে তুলতে হবে না হলে তার বন্ধু মারা যাবে।

ছেলেটি কিছুক্ষন পর বন্ধুকে উপরে তুলে আনলো ।

তারা দুজনেই গ্রামে এসে সবাইকে এ ঘটনা বলতে লাগলো।

কিন্তু গ্রামের সবাই তাদের কথা অবিশ্বাস করলো৷  বললো অনেক দুষ্টুমি হয়েছে আর মিথ্যে বলতে হবেনা ।

“সে তোমার ওজনে প্রায় দ্বিগুণ তুমি তাকে কিভাবে টেনে তুলবে?”

তারা সবাইকে বললো এটা মিথ্যা নয়৷ শুধু গ্রামের একজন বৃদ্ধ তাদের কথায় বিশ্বাস করলো ।

জ্ঞানী হিসেবে তার অনেক পরিচিতি আছে, সবাই যখন শুনলো যে সেই বৃদ্ধ বলেছে ঘটনা সত্য তাহলে জেনে আসা যাক, কি কারনে তিনি এটা বললেন।

তখন বৃদ্ধ সবাইকে বললো, মানুষের বিপদে যখন অন্য কোথাও থেকে সাহায্যের আশা থাকেনা এবং দেয়ালে পিঠ ঠেকে যায় তখন মানুষ তার সাধ্যের বাইরে গিয়েও চেষ্টা করতে পারে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফলাত পায়।

 

উপসংহারঃ 

আমাদের গল্প গুলো ভাল লাগলে অবশ্যই একটি কমেন্ট করবেন। এবং আমাদের সাইটটি ঘুরে দেখবেন। সের দশটি অনুপ্রেরণামূলক গল্পের তালিকা আবার নিচে দিয়ে দেয়া হলোঃ 

  • ১। ব্যাঙের দল

  • ২। প্রজাপতির গল্প

  • ৩। থিংক আউট অফ দ্যা বক্স (ভিন্ন ভাবে ভাবুন)

  • ৪। শেকলে বাধা হাতি

  • ৫। জ্ঞানীর দেওয়া সমস্যার সমাধান

  • ৬। জার ও জীবন

  • ৭। নিজেকে বদলাতে শিখুন 

  • ৮। যে যেমন করে তার কাছেই তা ফিরে আসে

  • ৯। সবাইকে সমান মূল্যায়ন করুন

  • ১০। পূর্ণ চেষ্টা সাফল্য আনে 
  •  

One thought on “সেরা ১০ বাংলা মোটিভেশনাল স্টোরি। অনুপ্রেরণামূলক ছোট গল্প

Comments are closed.