ক্যারিয়ার

কর্মক্ষেত্রে সফল হতে ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স(পর্ব-১)- Emotional intelligence in workplace.

কর্মক্ষেত্রে সফল হতে ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স।

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বা আবেগ সংক্রান্ত বুদ্ধিমত্তা। এই নামটি যদি আজকে আপনি প্রথম শুনে থাকেন তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কারণ নামটি বিশ্ববাসীর কাছে কিছুটা পরিচিত হলেও, আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশে এ টার্মটি খুব বেশি পরিচিত নয়। মানুষের আবেগ  তার দৈনন্দিন জীবনে কিভাবে প্রভাব বিস্তার করে এবং উন্নতি অবনতির কারন হয় তা এ পাঠের আলোচ্য বিষয়। আজকে এর ব্যাসিক ধারনা এবং ছোট একটি রিসার্চ স্টোরি দিয়ে শেষ করবো।

যদিও এই ধারণাটিও ১৯৬৪ সালে মাইকেল বেলডচ এর মাধ্যমে আবিষ্কৃত হয় কিন্তু তা জনপ্রিয়তা পায় বিজ্ঞান সাংবাদিক  ড্যানিয়েল গোল্ডম্যান এর মাধ্যমে। তিনি ১৯৯৫ সালে “ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স” শিরোনামে একটি বই প্রকাশ করেন যা তৎকালীন সময়ে খুব জনপ্রিয়তা পায়। বইটি এতটাই জনপ্রিয়তা লাভ করে যে তা নিউইয়র্ক টাইমসের সেরা বেস্ট সেলার লিস্টে দেড় বছর যাবত অবস্থান করে।

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স স্টাডির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজেকে জানা, নিজের আবেগকে জানা এবং আশেপাশের মানুষের আবেগকে জেনে এবং বুঝে সে অনুযায়ী পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জ্ঞান অর্জন করতে পারা। কিছুদিন আগেও এমন ভাবা হতো যে, যার আই কিউ (IQ – Intelligence Quotient) যত ভালো বুদ্ধিমত্তায় বা কাজের ক্ষেত্রে সে সকল মানুষ সবার থেকে এগিয়ে কিন্তু এখন সে ধারনাটা (EQ- Emotional intelligence Quotient)  এর কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেছে, সত্যিকার অর্থে বলতে গেলে চ্যালেঞ্জের মুখে নয় প্রায় পাল্টেই গেছে। এখন আপনার কর্মক্ষেত্রে IQ এর পাশাপাশি EQও খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হয়।

গোলম্যান তার মডেলটিকে মূলত চার ভাগে ভাগ করেছেন:

১।  self awareness বা নিজেকে জানা।

২।  self-management বা নিজের আবেগের ব্যবস্থাপনা। 

৩। social awareness বা সমাজকে জানা।

৪।  social relationship management বা সমাজ ব্যবস্থাপনা।

এই ধাপ গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আমরা পরবর্তীতে আলোচনা করবো। এখন ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স সম্পর্কিত একটি রিসার্চ স্টোরি বলে আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি।

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স এর উপরে রিসার্চারগন একটি রিসার্চ করেন। রিসার্চ এর অংশ হিসেবে দুই জন অপরিচিত ব্যক্তিকে একটি রুমের মধ্যে বসিয়ে দেন এবং তাদের সামনে 100 ডলার রেখে তা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তবে এখানে রিসার্চার দের দুটি শর্ত ছিল-

শর্ত নাম্বার ১ :  এই ১০০ ডলার  কিভাবে ভাগ হবে, মানে দুইজনের মাঝে কে কত ডলার নিবেন তা নির্ধারণ করে দিবেন প্রথম ব্যক্তি।

শর্ত নাম্বার ২:  দ্বিতীয় ব্যক্তি এটি নির্ধারণ করবেন যে প্রথম ব্যক্তি যেভাবে ডলার এর পরিমান বাটোয়ারা করেছেন তাতে দ্বিতীয় ব্যক্তি সম্মতি দিচ্ছেন কিনা। যদি ২য় ব্যাক্তি রাজি হন তাহলেই কেবল দুইজন ডলার নিয়ে যেতে পারবেন, আর তিনি যদি রাজি না হন তবে কেউই কিছু পাবেন না।

ফলাফলে একটি কমন প্যাটার্ন দেখা গেল, প্রথম ব্যক্তি যখন  ৫০-৫০ করে নিজেদের মধ্যে ভাগ করেন  তখন তাতে দ্বিতীয় ব্যক্তি তাতে সম্মতি  দিচ্ছেন। এমনকি যদি ৬০ এবং ৪০ করে ভাগ করেন তখনও দ্বিতীয় ব্যক্তি তাতে সম্মতি দেন।  কিন্তু  প্রথম ব্যক্তি যখন ৭০-৩০ করে ভাগ করেন তখন দ্বিতীয় ব্যক্তি তা রিজেক্ট করে দেন।

রিসার্চারগন ভাবলেন যে ১০০ ডলার হয়তো ডেভলাপড  কান্ট্রির জন্য খুব বেশি টাকা নয় তাই তারা এই পরীক্ষা ডেভলপিং কান্ট্রি মধ্যেও রিপিট করেন এবং বিভিন্ন লোকের মধ্যে তারা এটি বারবার রিপিট করতে থাকেন কিন্তু রেজাল্ট তারা প্রায় একই পান।

দ্বিতীয় ব্যক্তির জায়গায় যদি আপনি থাকতেন আপনিও হয়তো তাই করতেন ভাবতেন সে আমাকে মাত্র ৩০ কেন দিল? আর আমিইবা তাকে ৭০ কেন নিতে দিব? আপনি হয়তো ইমোশনালি ঠিকও হতেন।

কিন্তু যদি এই একই ব্যাপারটি আমরা একটু লজিক্যালি ভাবি তাহলে আমরা দেখব যে, দ্বিতীয় ব্যক্তির শুধু “হ্যাঁ” বলতে হতো এবং তিনি সেই ৩০ ডলার পেয়ে যেতেন। এবং তার বিনা পরিশ্রমেই এই ৩০ ডলার লাভ হতো। কারণ কিছু না পাওয়ার চেয়ে 30 ডলার পাওয়াটা লাভজনক।

আজকে তাহলে এ পর্যন্তই, পরবর্তী পর্বে আমরা আরো বিস্তারিত আলোচনা করবো। ভাল লাগলে সবার সাথে SHARE করতে ভুলবেন না।

One thought on “কর্মক্ষেত্রে সফল হতে ইমোশনাল ইন্টিলিজেন্স(পর্ব-১)- Emotional intelligence in workplace.

Comments are closed.